Logo
পডকাস্ট ভিডিও টেক-টক গ্রীন জেনারেশন কালচার & ট্রেন্ডস নিউজ এক্সট্রা
ABS.news is Under Development
We will back after:
-21
Days
-23
Hours
-59
Minutes
-26
Seconds

ভাঙা দেবী, রহস্যময় হাসি আর বুঁদ হয়ে থাকা এক দুপুর

Super Admin | Published: Monday, July 28, 2025
ভাঙা দেবী, রহস্যময় হাসি আর বুঁদ হয়ে থাকা এক দুপুর
সময়টা গ্রীষ্মকাল। তবে প্যারিসের আবহাওয়া তখন না গরম না ঠান্ডা। সেদিন প্যারিসের আকাশ ছিল নীলচে ধূসর। হালকা ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসছিল একটা অলৌকিক আমন্ত্রণ– চলো সময়কে ছুঁয়ে দেখা যাক। সে আমন্ত্রণেই প্যারিসের মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা মেট্রো ধরে ছুটে চলা। কখনও হেঁটে, কখনও-বা মেট্রোতে চলার দারুণ অনুভূতি সামনে এসে দাঁড়ালাম লুভর পিরামিডের কাচ দিয়ে নির্মিত সেই জ্যামিতিক অলংকারের সামনে। যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া আর প্রাচীনতার বিশালতা একসঙ্গে মিলেমিশে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞান সৃষ্টি করেছে। পিরামিডের নিচের প্রবেশপথ দিয়ে যখন মিউজিয়ামের ভেতরে ঢুকি, মনে হয় কোনো সুড়ঙ্গপথে ঢুকেছি; যা আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল অতীতের মহাকাব্যে। লুভর মিউজিয়াম যেন বহু শতাব্দীর বিবর্তনের গল্প। ১১৯০ সালে রাজা ফিলিপ অগাস্টাস এটি নির্মাণ করেন একটি সামরিক দুর্গ হিসেবে, প্যারিস শহরকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। তখন শহরের সীমানা ছিল অনেক ছোট আর লুভর ছিল সেই প্রাচীরঘেরা শহরের রক্ষাকবচ। ১৫৪৬ সালে রাজা ফ্রাঁসোয়া প্রথম এ দুর্গকে রূপান্তর করেন রাজপ্রাসাদে। তিনিই প্রথম শুরু করেন শিল্প সংগ্রহ। ঠিক সেখান থেকেই জন্ম নেয় লুভরের ভবিষ্যৎ পরিচয়। এ রাজাই লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে ফ্রান্সে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন মোনালিসা। পরে ১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের উত্তাল সময়ে লুভর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তখন এর সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫০০টির মতো; যা আজ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজারেরও বেশি শিল্পকর্মে। ভেতরে ঢুকেই চোখ ছানাবড়া। চারপাশে শুধু ছবি, মূর্তি, দেয়ালচিত্র, শিল্পকর্ম। মিসরের শবাধার, গ্রিক দেবতাদের ভাস্কর্য, রেনেসাঁ যুগের চিত্রকর্ম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ভারতীয় মূর্তি– পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের শিল্প যেন এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। যেদিন দা ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’র সামনে দাঁড়ালাম, মনে হলো আমি সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। ওই রহস্যময় হাসি আমাকে চুপ করিয়ে দিল। শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরও যে ছবি লাখো-কোটি দর্শককে একসঙ্গে স্তব্ধ করে দিতে পারে– তা তো কেবল মোনালিসাই। মোনালিসার পাশে হেঁটে গেলে আপনি দেখতে পাবেন আরেক বিস্ময়– ভেনাস দে মিলো। দুই হাত ভাঙা, তবু অপূর্ব নারীত্বে পূর্ণ এই গ্রিক দেবীর মূর্তি যেন এক শাশ্বত সৌন্দর্যের চিহ্ন। আবার সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে ‘উইংড ভিক্টরি অব সামোথ্রেস’, ডানাওয়ালা এক দেবী, যিনি যেন বিজয়ের অঙ্গভঙ্গিতে হাঁটছেন সময়ের বুকে। একটি হলঘরে দেখলাম মিসরের এক ফেরাউনের মমি সংরক্ষিত আছে। তার চোখ দুটো বন্ধ, অথচ মনে হলো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। পাশেই এক প্রাচীন স্ফিংক্স– মিসরের মরুভূমি পেরিয়ে এসে যেন এখানে বসে আছে ক্লান্ত হয়ে। আরেক করিডোরে দেখি জ্যাক-লুই ডেভিডের বিশাল ক্যানভাস– ‘দ্য করোনেশন অব নেপোলিয়ন’, যেখানে সম্রাট নিজেই নিজের মুকুট পরাচ্ছেন। এ ছবির প্রতিটি চরিত্র যেন জীবন্ত, প্রতিটি দৃষ্টির ভঙ্গিতে গল্প। লুভরের সবচেয়ে মোহময় দিকটি ছিল এর স্থাপত্য। দৃষ্টিনন্দন দেয়াল, উঁচু ছাদ, ধ্রুপদি কারুকাজে পূর্ণ প্রতিটি করিডোর– প্রতিটি কোণেই যেন একেকটা জীবন্ত উপন্যাস। মিউজিয়ামের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই যেন ইতিহাসের নানা চরিত্র সামনে এসে দাঁড়ায়। কারও হাতে রংতুলি, কেউ বর্ম পরে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে, কেউবা চুপচাপ বসে জীবনের দুর্বোধ্যতা আঁকছে ক্যানভাসে। এই জাদুঘর শুধু জ্ঞান নয়, এক গভীর আবেগের আধার। শিল্পের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা এখানে এসে যেন আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে আধুনিক বিমূর্ত চিত্র পর্যন্ত– সবকিছুই মানুষ রেখে গেছে ভবিষ্যতের জন্য। লুভরে হাঁটতে হাঁটতে একটা অদ্ভুত বিষণ্নতা গ্রাস করেছিল আমাকে। কারণ এত সৌন্দর্য, এত ইতিহাস দেখে প্রশ্ন জাগে– আমরা কী রেখে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য? এই বিশ্ব কি এখনও শিল্পের প্রতি ততটাই শ্রদ্ধাশীল আছে, যতটা ছিল দা ভিঞ্চির যুগে?তবে পরক্ষণেই মনে হলো, শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় প্রমাণই তো হলো দর্শক। লুভর শুধু একটি মিউজিয়াম নয়, এটি এক চলমান ইতিহাসের মহাকাব্য। এখানে একটি ছবি মানে কেবল রং নয়, একটি মূর্তি মানে শুধু পাথর নয়, বরং একটি জাতির আত্মা, একটি সভ্যতার কল্পনা, একটি মানুষের অশ্রু, আনন্দ, ভালোবাসা। ফিরে আসার সময় আমি আবার দাঁড়ালাম পিরামিডের নিচে। তখন সন্ধ্যা নামছে প্যারিসে। লুভরের চারপাশে হালকা হলুদ আলো জ্বলে উঠেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি– শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে, কেউ ছবি তুলছে, কেউ বসে আছে চুপচাপ, কেউ হয়তো ভালোবাসায় মুখ ডুবিয়েছে। আমি ভাবছি– লুভর হয়তো কোনোদিন আমায় ভুলে যাবে, কিন্তু আমি? আমি তো চিরকাল এ অভিজ্ঞতা বহন করব। কারণ, শিল্প একবার হৃদয়ে বাসা বাঁধলে তা আর কোনোদিন চলে যায় না।
Leaving absnews Your about to visit the following url Invalid URL

Loading...
Comments


Comment created.

মোস্ট পপুলার

সাবস্ক্রাইব টু নিউজলেটার

আমার এলাকার খবর

Weather Outlook

Clear

Dhaka, Bangladesh

Wind: 10.1 kmph · Precip: 0 mm · Pressure: 1014 mb

21.7°C

Thu

21.8°C

Fri

21.9°C

Sat

22.4°C

মিডিয়া নিয়ে আরও পড়ুন